হবিগঞ্জ, ২৬ নভেম্বর: শহরের টাউন মডেল সংলগ্ন পুকুরের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ সংগঠকরা। আজ বুধবার বিকেলে现场 পরিদর্শনে গিয়ে পুকুরের চলমান উন্নয়নকাজ দেখে হতাশা প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনা করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা প্রয়োজন ছিল।
পরিবেশ সংগঠকদের প্রতিনিধিরা জানান, প্রায় দেড় দশক ধরে আরও কয়েকটি পুকুরের সঙ্গে এই পুকুরটিও দখলমুক্ত করার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করে আসছেন। পুকুরটি দখলমুক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ আগস্ট হবিগঞ্জ সফরকালে পরিবেশ, বন, জলবায়ু ও পানি উপদেষ্টা সরেজমিনে পুকুরটি দেখেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
পরে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের অনুরোধে পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি সুব্রত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি পুকুরটির নকশা প্রস্তুত করেন এবং সরেজমিনে হবিগঞ্জ এসে বিষয়টি নিয়ে সাবেক জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী নকশা তৈরি করে দেন তিনি।
তবে বর্তমান উন্নয়নকাজে তলদেশ থেকে চারপাশে পাকা দেয়াল নির্মাণ ও ছোট ছোট ছিদ্র রাখার যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেন সংগঠকরা। তাঁদের অভিযোগ, পুকুরের পানির সঙ্গে পাড়ের মাটির স্বাভাবিক সম্পর্ক ব্যাহত হবে এবং পুকুরটি হারাবে তার প্রাকৃতিক চরিত্র।
তাঁরা আরও জানান, উন্নয়নকাজ শুরু হওয়ার পর সংগঠকদের একটি প্রতিনিধি দল সাবেক জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে আশঙ্কার কথা তুলে ধরে। জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেছিলেন যে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখেই কাজ করা হবে। কিন্তু চারপাশে পাকা দেয়াল তোলার ফলে হবিগঞ্জের একাধিক পুকুরের মতো এ পুকুরের পানিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংগঠকরা উল্লেখ করেন, অনুরূপভাবে বিআম ল্যাবরেটরি স্কুলের পুকুরটিতেও তলদেশ থেকে চারদিকে পাকা দেয়াল দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পানি–মাটি–প্রকৃতির স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা পুকুরের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তাঁরা বলেন, একসময় পুকুরের শহর নামে পরিচিত হবিগঞ্জে অনেক পুকুর ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে। যে কয়েকটি পুকুর–জলাশয় এখনো টিকে আছে সেগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণের দাবি জানান তাঁরা।
পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সংগঠক ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, ধরা হবিগঞ্জের আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনি, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, অ্যাডভোকেট বিজন বিহারী দাস, যাইদুর রহমান সৌরভ, আবু নাসের সামি, বুরহান তালুকদার রাহুল প্রমুখ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

নিজস্ব প্রতিনিধি :